কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক ঝুঁকিতে খুলনার কয়রাসহ উপকূলের কয়েকটি উপজেলার নারী ও শিশুরা। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এখানে বসবাস করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সিডর, আইলা, বুলবুল, আমফান, সিত্রাং, মোখা, রেমালের মতো প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে উপকূলে। এছাড়াও আছে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, জলবদ্ধতা ও অতিবৃষ্টির প্রকোপ। ফলে বার বার বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে উপকূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবারের সদস্যদের। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের। প্রতিনিয়ত লড়াই-সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় উপকূলের মানুষদের। নারী-পুরুষের দিনরাত সংগ্রামে জোগাড় হয় দুমুঠো খাবার। বেশিরভাগেরই জানা নেই তাদের অধিকারের কথা। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবে ক্ষতির হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না কৃষকের ফসল, মৎসসম্পদ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। অতিরিক্ত গরমে মারা যাচ্ছে তাদের ঘেরের মাছ, আবার কখনো ভারি বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, তাবদাহ এবং অতিবৃষ্টির কারণে অনেকদিন পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারে না এসব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। কয়রার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল মালেক বলেন, উপকূলীয় এলাকায় দরিদ্র্যের কষাঘাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে। বয়স্কদের পাশাপাশি এসব অঞ্চলের শিশুরা অল্প বয়সেই জলবায়ু পরিবর্তনে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে হয় বাসস্থান হারানো ভয় তাদের মনে। লবণাক্ত পানি ঢুকে ফসল ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যেন এসব অঞ্চলের নিয়মিত ঘটনা। দুর্যোগকালীন বিদ্যালয়গুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তখন লেখাপড়ার করার সুযোগ থাকে না। অনেকেই বাসস্থান হারিয়ে উন্নত জীবনের আশায় শহরমুখী, অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে, আর এতে করে বেড়েছে মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার। জলবায়ু এই পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় খুলনার কয়রা এলাকার অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। আধুনিক এই যুগেও কুসংস্কারের কারণে জন্মের পর অবহেলায় বেড়ে ওঠে এসব অঞ্চলের মেয়ে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতা ও পরিবারের বোঝা মনে করায় অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় এখানকার অধিকাংশ মেয়ে শিশুদের। অল্প বয়সে গর্ভধারণের ফলে বাড়ছে মা ও শিশু মৃত্যু। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ায় বিগত দিনের চেয়ে নদ-নদীতে এবং খাল বিলের পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। নোনা পানি পানের কারণে নারীরা জরায়ুর রোগ, গর্ভপাত, স্পর্শকাতর স্থানে ক্ষত কিংবা অনেক জটিল রোগে ভুগছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
